তৈরি পোশাকের জন্য সুনির্দিষ্ট বাজারে আটকে না থেকে নতুন নতুন বাজার খুঁজতে এই খাতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার না থাকার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন….
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, কানাডাসহ অনেক উন্নত দেশই আমাদের এই সুযোগ দিচ্ছে, আমেরিকাই কেবল দিচ্ছে না। অথচ এলডিসি দেশ হিসেবে আমাদের সে অধিকার রয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, উল্টো এই দেশটিকে আমরা ট্যাক্স দিয়ে যাচ্ছি। বছরে যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ সাড়ে আটশ’ মিলিয়ন ডলার ট্যাক্স দিয়ে যাচ্ছে।
এজন্য বলা যায়, আমেরিকা আমাদের ট্যাক্সেও চলে, বলেন শেখ হাসিনা।
শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) হোটেল সোনারগাঁওয়ে দ্বিতীয় ‘ঢাকা অ্যাপারেল সামিট-২০১৭’ এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
‘Together for a better tomorrow’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে তৈরি পোশাকশিল্প প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) উদ্যোগে এ অ্যাপারেল সামিটের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, পোশাকশিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশ, বিশেষ করে এর আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারণে বিজিএমইএ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। পাশাপাশি সরকারও প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা এবং প্রণোদনা দিয়ে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বিজিএমই’কে সি অ্যান্ড ও ইস্যু করার ক্ষমতা ব্যবসায়ীদের দেওয়া হয়েছে। পোশাকশিল্পের স্বার্থে BGMEA University of Fashion and Technology স্থাপনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এই ফ্যাশন ইউনিভার্সিটি গড়ার পরামর্শও তারই ছিলো বলে বক্তৃতায় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
টেকসই উন্নয়নের জন্য পোশাকশিল্প সম্পর্কিত মন্ত্রিসভা কমিটিও গঠন করে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসায়ীদের মনে রাখতে হবে আমরা কেবল রপ্তানিই করবো না, দেশের মানুষের ক্রয় ক্ষমতা যাতে বাড়ে সে জন্যও কাজ করতে হবে। সরকার এই লক্ষ্যেই নীতিমালা নিয়েছে বলে জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, শ্রমমন্ত্রী মুজিবুল হক, ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মেদু বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান।
উন্নয়নের পথে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের প্রতি আরো বেশি বেশি বিনিয়োগের আহ্বাবান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, কেবল অর্থ আয় করলেই হবে না, উন্নয়ন খাতেও ব্যয় করতে হবে। আশুলিয়ার পথে একটি এলিভেটেড ওয়ে নিজেরা যাতে নির্মাণ করে নেন, ব্যবসায়ীদের প্রতি সে আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, সরকার অবশ্যই করে দেবে কিন্তু মালিকরা তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে নিতে পারবেন।
দেশে যে নতুন ২০ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ার উদ্যোগ রয়েছে তার মধ্যে দুটি তৈরি পোশাক খাতের জন্য বরাদ্দ দেওয়ার আগ্রহও প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী। বিজিএমইএ নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা স্থান নির্ধারণ করে জানান, আমরা বরাদ্দ দেবো। এখানে সেখানে বিচ্ছিন্নভাবে কারখানা না গড়ে একটি স্থানে করে নিলে তা সকলের জন্যই ভালো হবে।
পোশাক পণ্য উৎপাদনেও বৈচিত্র্য আনতে শিল্পউদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে আমাদের এগুতে হবে। উন্নত বিশ্ব যা চায় তা যেমন পূরণ করতে হবে, তেমনি আমাদেরও নতুন নতুন উদ্ভাবন দিয়ে তাদের কাছে তুলে ধরতে হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সব ধরনের সহযোগিতা থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
স্বাধীনতার সূবর্ণ জয়ন্তীতে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রপ্তানি আয়ে সরকারের নেওয়া লক্ষমাত্রা অর্জনে পোশাক শিল্প মালিকদের সার্বিক সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার পথে তৈরি পোশাক খাতের বড় অবদান রয়েছে। ধীরে ধীরে আমাদের অর্থনীতি কৃষিনির্ভরতা থেকে শিল্প নির্ভরতার পথে এগিয়েছে, এমনটা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটাই সারা বিশ্বের উন্নয়নের পথ।
শুদ্ধ কৌশলেই দেশ এগুচ্ছে এবং এভাবেই সম্মৃদ্ধির পথে যাবে, বলেন অর্থমন্ত্রী।
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, জাতির জনকের স্বপ্নের অর্থনৈতিক মুক্তির পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তার কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ৭.২ শতাংশ এবং রপ্তানি আয় ৩০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
পিয়েরে মেদু বলেন, ইউরোপ তার মার্কেটে বাংলাদেশে পণ্য শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার দিয়েছে। এখানকার পণ্য ইউরোপের মার্কেটে জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ অগ্রগতির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তৈরি পোশাক খাতে শ্রমিকের অধিকার, কর্মপরিবেশ ও সকলের অংশীদারিত্বের ওপর জোর দেন তিনি।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট এসময় উপস্থিত ছিলেন।
এ বছরের অ্যাপরেল সামিটে দুটি অধিবেশনের আয়োজন করা হয়েছে। এসব অধিবেশন থেকে সময়োপযোগী সুপারিশ আসবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে তিনি এই সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করেন।
সম্মেলনে দেশি বিদেশি শিল্পদ্যোক্তা ও ক্রেতারা অংশ নিচ্ছেন।